হাম রহে ইয়া না রেহে কাল…

আসমান ডেস্ক: বিদায় নিতেই হয়। ছেড়ে যেতে হয় প্ৰিয় এই জীবন। ধরা দিতে হয় মৃত্যুর কাছে। তার আলিঙ্গনেই জীবনের সমাপ্তি।সকলের ক্ষেত্রেই সেই এক নিয়ম। মৃত্যুর সুর অতিক্রম করে সাধ্য কার।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন,

মরণ যেদিন দিনের শেষে আসবে তোমার দুয়ারে

সেদিন তুমি কী ধন দিবে উহারে।


ভরা আমার পরানখানি
সম্মুখে তার দিব আনি,
শূন্য বিদায় করব না তো উহারে–
মরণ যেদিন আসবে আমার দুয়ারে।
মৃত্যু আছে বলে জীবন এমন মোহময়। তার এত কদর। তা এমন দামি। বিছানায় শুয়ে মৃত্যুর প্রতীক্ষার মত কষ্টকর কিছু হয় না। সে মৃত্যু যেন বড় বেশি অমর্যাদার । বার্ধক্যের সাজে আসা মৃত্যু নিয়ে বহু মনে নিস্পৃহতা ও ঠাণ্ডা উদাসীনতা থাকে। জীবন যেমন তারুণ্যে এবং যৌবনেই সবথেকে উপভোগ্য, বিদায়ও তেমন যৌবনে হলেই মৃত্যুর সমাদর। তবেই লোকে কাঁদে। বুক চাপড়ায়। অপরিচিত জনও এমন মৃত্যুতে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সেই মৃত্যু যদি কে কে -র মত করে হয়, তবে ও কথাই নেই।
মৃত্যুকে জয় করা যায় না। কিন্তু মৃত্যুকে কেউ কেউ স্মরণীয় করে রাখার সুযোগ পান। কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ ওরফে কেকে তাদের একজন। কলকাতার নজরুল মঞ্চে গান গাইতে গাইতেই তিনি অসুস্থ বোধ করেন। পরে মৃত্যুর আলিঙ্গনে বাঁধা পড়েন। মঙ্গলবার রাতে মঞ্চ থেকে নামার আগেও তিনি গেয়েছিলেন, ‘ইয়ারো দোস্তি বড়ি হি হাসিন হ্যায়, ইয়ে না হো তো কেয়া ফির বোলো ইয়ে জিন্দগি হ্যায়…’ । মঙ্গলবার নজরুল মঞ্চে ২০টি গান গেয়েছিলেন কেকে। মৃত্যুর সেই কালজয়ী সুরে যে তিনি ভেসে যাচ্ছেন গানের ওপারে তা বুঝতে পারেননি। পারার কথাও নয়। মৃত্যু কারো কারো সঙ্গে এমন ব্যবহার করে যেন তাঁকে সে মর্যাদা দিতে এসেছে। জীবনেও যেমনটা হয়। অনেক কম বয়সে কেউ কেউ খ্যাতির চূড়া ছুঁয়ে ফেলে। সেই সাফল্যর নাগালে পেতে জীবনের বহু বসন্ত খরচ করতে হয় অন্যকে। তেমনই বহু মানুষ আজও হতাশায়, বার্ধক্যে, যন্ত্রনায় প্রতিদিন মৃত্যু কামনা করে। কিন্তু মৃত্যু আসেনা তাদের জীবনের ওপারে নিয়ে যেতে। কেকে শেষ বার গেয়েছিলেন, ‘হাম রেহে ইয়া না রেহে কাল’। তা যে মৃত্যুও এমন সিরিয়াসলি নেবে কে জানত! কেকের কণ্ঠের ভিতরেই ছিল একটা মন ছুঁয়ে যাওয়া বিষাদ। যে বিষাদ চোখের জল আর হৃদয়ের আকুলতায় একাকার হয়ে যায়। এই ৫৪ বছরের জীবনে তাঁকে নিয়ে কোনও বিতর্ক হয়নি। সেই নব্বইয়ের দশক থেকে তিনি লাগাতার গান গেয়ে চলেছেন। কেবল হিন্দি নয়, গেয়েছেন বহু ভাষায়। তাঁর কণ্ঠের বিষাদ মূর্ছনা থেকে সরে আসার উপায় ছিল না। কে কের মৃত্যুকে বিষাদে ঢেকেছে অগণিত মন।জীবনে তিনি সফল। আর মৃত্যু তাঁর মর্যাদাকে বাড়িয়ে দিয়েছে আরও বহুগুন। তবে একথা কেবল দূর থেকেই বলা যায়।প্রিয়জনদের মনে অকস্মাৎ যে শূন্যতা তৈরী হল, তা পূরণ হতে অনেক সময় লাগবে। সময়ের পলি যতদিন না মনে জমাট বাঁধে ততদিন এই বিষাদের চোরা স্রোত থেকে তাদের পরিত্রান নেই।
